২৪খবরবিডি:'ভূমি নিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতি করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে 'ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩'-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।খসড়ায় ভূমি নিয়ে প্রতারণা, জালিয়াতিসহ অপরাধের ধরনগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়।বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, খসড়া আইনে ভূমির কতগুলো অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে।'
'সেসব অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, যাতে নাগরিকরা নিজ নিজ মালিকানাধীন ভূমির ওপর অধিকার নিশ্চিত করতে পারেন। আইনে ভূমিবিষয়ক প্রধানমন্ত্রী প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং প্রতিরোধ, দমন ও প্রয়োজনে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, অন্যের মালিকানাধীন ভূমি নিজের বলে দাবি করলে, তথ্য গোপন করে কোনো জমি হস্তান্তর বা সমর্পণ করলে, নিজের মালিকানার অতিরিক্ত জমি বা অন্যের মালিকানাধীন জমি জেনেশুনে অন্য ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর বা সমর্পণ করলে, কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে বা জ্ঞাতসারে এক ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তি হিসেবে দেখিয়ে কিংবা ভিন্ন কোনো ব্যক্তি বলে পরিচয় দিয়ে সম্পত্তি হস্তান্তর বা সমর্পণ করলে সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, কোনো ব্যক্তির ক্ষতি বা অনিষ্ট করার জন্য বা কোনো ব্যক্তিকে কোনো সম্পত্তি ত্যাগ করত
ে বা চুক্তি সম্পাদন করতে বাধ্য করার ইচ্ছায় কিংবা প্রতারণা করা যেতে পারে—এ রকম মিথ্যা দলিল বা কোনো মিথ্যা দলিলের অংশবিশেষ প্রস্তুত করলেও সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড দেওয়া হবে।ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এই আইনে শুধু ভূমিসংক্রান্ত প্রতারণা ও জালিয়াতিগুলোকে চিহ্নিত করে শাস্তির বিধান ঠিক করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রতারণার জন্য যে শাস্তি রয়েছে, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনেও প্রতারণার জন্য একই শাস্তি রাখা হয়েছে।'
'একইভাবে দণ্ডবিধির ৪৬৮ ধারায় জালিয়াতির জন্য যে শাস্তি রয়েছে ভূমি নিয়ে জালিয়াতির জন্য একই রকম শাস্তি রেখেছে সরকার। আগে শুধু সরকারি জমি কেউ অবৈধভাবে দখল করলে উদ্ধার করা হতো।' এই আইন হলে সরকারি জমির মতো জনগণের জমিও উদ্ধার করা হবে। কেউ রাস্তা বন্ধ করলে, রাতের আঁধারে জমি দখল করলে সরকার তা উদ্ধার করবে। এ ছাড়া দলিল যার জমি তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন) মো. খলিলুর রহমান গতরাতে ২৪খবরবিডিকে বলেন, এই প্রথম জমিসংক্রান্ত জনগণের জন্য একটি আইন করা হচ্ছে। এই আইনের সর্বোচ্চ গুরুত্ব বোঝানোর জন্য শুধু কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কেউ অর্থ দিয়ে বেঁচে যাবেন, সেটা যেন না হয়—এ জন্য অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়নি। অবৈধ দখলের শাস্তি : এ ছাড়া ভূমি অবৈধ দখল, সরকারি স্বার্থযুক্ত ও জনগণের ব্যবহার্য ভূমি অবৈধভাবে ভরাট ও শ্রেণি পরিবর্তন করলে দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়া হবে।'
'সরকারি কর্মকর্তারা দায়মুক্তি পাবেন না : এই আইনের ফলে সরকারি কর্মকর্তারা কোনো দায়মুক্তি পাবেন না। সাধারণ মানুষের মতো একই শাস্তি পাবেন সরকারি কর্মকর্তারা। মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, যদি সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে ভূমি নিয়ে প্রতারণা বা জালিয়াতির সঙ্গে সহযোগী হিসেবে পাওয়া যায়, তাহলে সাধারণ মানুষের মতো একই পরিমাণ শাস্তি তিনিও পাবেন। এখানে কাউকে আলাদা করা হয়নি। কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য : মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, আইনানুগ কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে কোনো আইন প্রয়োগে বাধা দিলে দুই বছর; অপরাধ সংঘটন বা সহায়তা করা বা প্ররোচনা করলেও একই সাজা তাঁরা পাবেন। আইনের খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, এসব অপরাধ ফৌজদারি কার্যবিধির মতো সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে হবে। প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বা মোবাইল কোর্ট আইনের মাধ্যমে এই আইনের প্রয়োগ করা যাবে। জমির মালিকের সঙ্গে আবাসন কম্পানি চুক্তি করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভূমি মালিকের অংশ তাকে বুঝিয়ে না দিলে বা দখল না দিলে দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। সরকারি-বেসরকারি বা সংস্থার জমি বেআইনি দখল করলে ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড হবে। মাটি, বালু বা আবর্জনা দ্বারা, অন্য কোনো পদার্থ বা উপায়ে বা অবকাঠামো নির্মাণ করে নদী, হাওর, বিল বা জলাভূমির আংশিক ক্ষতি করা হলে অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড হবে। আর সম্পূর্ণ ক্ষতি করা হলে ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড হবে। প্রতিবেশী ভূমি মালিকের ক্ষতিসাধন : কেউ যদি সহমালিক বা পাশাপাশি থাকা জমির ক্ষতি করেন, বা কোনো পরিবর্তন আনেন, তাহলে এক বছর থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনা : এই আইনে বর্ণনা করা যেকোনো অপরাধ সংঘটনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করলে সেই ব্যক্তিরও অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তির মতো সাজা হবে।'