সর্বশেষ

'নানা পদক্ষেপ নির্বাচনকালীন প্রশাসন চাঙ্গা রাখতে'

প্রকাশ :


২৪খবরবিডি: 'নির্বাচনমুখী প্রশাসন সাজাতে পুরোদমে মন দিয়েছে সরকার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে– এমনটা ধরে নিয়েই পরিকল্পনা চূড়ান্ত হচ্ছে। সামনের দিনে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসনের শীর্ষ মহল। সংশ্লিষ্ট শীর্ষ দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এ তথ্য মিলেছে।প্রশাসনকে কেন্দ্র করে কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করছে বিরোধী দল– এমন কথা সচিবালয়ে ঘুরছে। তাঁদের মধ্যে এ নিয়ে কানাঘুষাও চলছে।এমন পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সরকারের পক্ষ থেকেও কর্মকর্তাদের মনোবল চাঙ্গা রাখার উপায় খোঁজা হচ্ছে।'
 

'বর্তমান সরকারের আমলে বারবার পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা যাতে নির্বাচন সামনে রেখে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন, তা নিশ্চিত করতে চাইছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি রুমে প্রশাসনের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ চার কর্মকর্তা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। অনানুষ্ঠানিক ওই বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাহ্‌ উদ্দিন চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মনোবল চাঙ্গা রাখা এবং যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। সচিবালয় সূত্র জানায়, তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠকটি হয় মন্ত্রিসভার এক সদস্যের রুমে। তখন ওই মন্ত্রিও উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও জননিরাপত্তা সচিব মন্ত্রীর রুমে যান। তখন বেশ কিছু দর্শনার্থীর চাপে ছিলেন মন্ত্রী। এ চাপ সামলানোর পরপরই মন্ত্রিপরিষদ সচিব রুমে ঢোকেন। এর পর তাঁরা একান্তে অন্তত তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন বলে জানা গেছে। বৈঠকের টেবিলে বেশ কিছু দৈনিক পত্রিকা ছিল। এর মধ্যে কয়েকটি পত্রিকা একজন আরেকজনের দিকে দিয়ে বিভিন্ন নিউজ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এর মধ্যে নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর চূড়ান্ত আন্দোলনবিষয়ক কয়েকটি নিউজ তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবেই করতে চায় সরকার। দেশি-বিদেশি মঞ্চগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে এমন আশ্বাস দেওয়া হলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সেটা মানছে না। তাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে এ সংক্রান্ত সমঝোতা না হলে যে কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। এমন অবস্থা ধরে নিয়ে মধ্যম ও উচ্চ পর্যায়ে দক্ষ এবং চৌকস কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।'


'এ কারণে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসনে আরও অন্তত তিন দফা পদোন্নতি দেওয়া হবে। প্রশাসনের ২২ ব্যাচের কর্মকর্তাদের যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। এ-সংক্রান্ত কাজ অর্ধেক এগিয়েছে। ব্যতিক্রম না হলে জুলাই মাসের মধ্যেই তাঁরা পদোন্নতি পাবেন। এর পরপরই পদোন্নতির কাতারে আসবে প্রশাসনের ২৯তম ব্যাচ। এ ব্যাচের সিনিয়র সহকারী সচিবরা এরই মধ্যে উপসচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। পদোন্নতিযোগ্যদের তথ্য চেয়ে জনপ্রশাসন থেকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে চলতি বছর একবার অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি হলেও নির্বাচনের আগে আরেকবার পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে। ১৮ ব্যাচকে মূল ধরে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি হবে বলে জানা গেছে। চলতি বছরে অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি হওয়ায় স্বাভাবিক নিয়মে এবার পদোন্নতি বিবেচনায় আসার কথা নয়। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে পদভেদে দক্ষ অফিসারের রিজার্ভ বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।'
 

'সর্বশেষ গত মে মাসে ১৭ ব্যাচের কর্মকর্তাদের যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লেগেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দেরি করে পদোন্নতি দিলেও অন্যবারের চেয়ে বেশি কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন এবার। এটাও নির্বাচনী পুরস্কার বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এর আগে একাধিকবার পদোন্নতিযোগ্য মূল ব্যাচের অর্থাৎ ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা থাকার পরও ১০০ জনের বেশি অতিরিক্ত সচিবের পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। প্রয়োজনে ব্যাচ ভেঙে একই ব্যাচকে মূল ধরে দুই বছরে দু'বার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এবার অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার সময় মূল ব্যাচের পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা ছিলেন মাত্র ৪৯ জন। তাঁদের মধ্যে ৪২ জনসহ ১১৪ জনকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রশাসনে যুক্ত হওয়া ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা ও অন্যান্য ব্যাচের লেফট-আউট কর্মকর্তারা আছেন। তবে ১০০ জনের বেশি অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পাবেন– এটা প্রায় কেউই আন্দাজ করতে পারেননি।  নির্বাচনী বছর হিসেবে এটা হয়েছে বলে মনে করেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।'


'মাঠ প্রশাসনে বড় পরিবর্তন'-
'এদিকে মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ পদ– বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, এসপি, এবং ইউএনও পদেও বেশ পরিবর্তন আসবে। নির্বাচনকালে এ পদগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরই মধ্যে পুলিশের ডিআইজি পদে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাঠ প্রশাসনে পরিবর্তন বিষয়ে হোমওয়ার্ক শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনের পরপরই ২২ থেকে ২৭টি জেলার ডিসি পরিবর্তন হতে পারে। বর্তমানে এ পদে প্রশাসনের ২২ ব্যাচের কর্মকর্তা রয়েছেন অন্তত ২০ জন। তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে এমনিতেই সরিয়ে নিতে হবে। এর বাইরে আরও কয়েকটি জেলার ডিসির বদল বা প্রত্যাহার হতে পারে বলে জানা গেছে। আর বিভাগীয় কমিশনার পদে দায়িত্বশীল আচরণ করতে না

'নানা পদক্ষেপ নির্বাচনকালীন প্রশাসন চাঙ্গা রাখতে'

পারলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থায় যাবে সরকার। খুলনার সদ্য সাবেক বিভাগীয় কমিশনারের উদাহরণ দিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, সিটি নির্বাচনের মাত্র চার দিন আগে বিভাগীয় কমিশনার পরিবর্তনেও পিছপা হয়নি সরকার। তাই যাঁরা বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্বে আছেন তাঁদের জন্য অগ্নিপরীক্ষা সামনে। যদি কারও পা পিছলে যায়, সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হবে। এ কারণে বিকল্প প্রার্থীও খুঁজে রাখা হচ্ছে। প্রশাসন সূত্র জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের ডিসি নিয়োগ দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে কাজ চলছে। জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত বৈঠকে দায়িত্বশীল সব কর্মকর্তার উপস্থিত থাকতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে যদি কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়হীনতার প্রমাণ পাওয়া যায়, সঙ্গে সঙ্গে সেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবে সরকার।'

'চুক্তি নিয়ে গ্যাঁড়াকল ও বঞ্চনা'-

'আস্থাবান অফিসারদের নির্বাচন পর্যন্ত রাখতে এরই মধ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। প্রশাসন এবং প্রশাসনের বাইরে সচিব ও সিনিয়র সচিব মিলিয়ে এক ডজনের বেশি কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন। পুলিশ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদগুলোতে নিকট অতীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের নজির নেই। সেখানে আইজিপি ও র‍্যাবের মহাপরিচালককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আগামী নির্বাচনের আগেই প্রশাসনের শীর্ষতম দুই পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের স্বাভাবিক কর্মকাল শেষ হচ্ছে। তাঁদের দু'জনকেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে সচিবালয়ে আলোচনা আছে। এদিকে শীর্ষ পদগুলোতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাড়ার কারণে প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ আছে। তাই চুক্তির কারণে সচিব হতে না পারা কর্মকর্তাদের জন্য বার্তা দেওয়া হচ্ছে, যাঁরা সচিব হওয়ার মতো তাঁদের এ সরকারই পদোন্নতি দিয়ে এই পর্যন্ত এনেছে। অন্য কোনো সরকার ক্ষমতায় এলে তাঁরা এমনিতেই টার্গেটে পড়বেন। তাই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলে তাঁদের বিষয়টিও বিশেষ বিবেচনায় দেখা হবে। এমনভাবে তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসনের সূত্রগুলো এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টানা দেড় দশকে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তার পদোন্নতি দিলেও কিছু কর্মকর্তা পদোন্নতির বাইরে থেকে গেছেন। বঞ্চিত এসব কর্মকর্তা যাতে সংঘবদ্ধ হয়ে কোনো বৈঠকে না  যান, সে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে সচিবালয়ের ভেতর এবং বাইরের কর্মচারী সংগঠনগুলো যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, তা নিশ্চিত করতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।'


'রাজপথের ভাষা পড়ার চেষ্টায় আমলারা'-
'এদিকে সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যত কিছুই করুক; নিজেদের বিবেচনার ওপরেই আস্থা রাখতে চাচ্ছেন কর্মকর্তারা। উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পর্যায়ের অন্তত জনাদশেক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে ২৪খবরবিডির সাথে । এর মধ্যে অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার এক কর্মকর্তা কিছুদিন আগে বিদ্যুৎ সংকটকে কেন্দ্র করে বিএনপির একটি মিছিল সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে  ২৪খবরবিডিকে বলেন, 'এত বড় মিছিলটি মহাখালী এলাকায় হয়ে গেল; কিন্তু পুলিশের কোনো তৎপরতা দেখলাম না। বিষয়টি আমার কাছে ইঙ্গিতপূর্ণ মনে হয়েছে। এটি গত এক দশকের পুলিশের আচরণের সঙ্গে যায় না। দেখা যাক, রাজপথ কী ইঙ্গিত দেয়।' অন্যদিকে ছাত্রজীবনে সরকার-সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত বা পদবিপ্রাপ্ত নেতা ছিলেন, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বা সচিবদের পিএস ছিলেন বা আছেন, তাঁরা চলমান সরকারের যে কোনো অবস্থান বিষয়ে আপসহীন ও অটল আছেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, সরকারের ধারণা, দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে সব পর্যায়েই সরকারের বিশেষ অনুগত একটি শ্রেণি তৈরি হয়েছে। তাই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কোনো সংকট সরকারকে বিচলিত করতে পারবে না।'

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত