সর্বশেষ

রাজপথে কঠোর আন্দোলনে যেতে ঘরেবাইরে চাপের মুখে বিএনপি

প্রকাশ :


২৪খবরবিডি: 'চলমান অর্থনৈতিক সংকট, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এখনই রাজপথে কঠোর আন্দোলনে যেতে ঘরেবাইরে চাপের মুখে বিএনপি। ভোলায় 'শান্তিপূর্ণ' কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে দু'জন নেতা নিহতের ঘটনায় দলের ভেতর চাপ আরও জোরদার হয়েছে।'

অবশ্য এ মুহূর্তে হার্ডলাইনে না গিয়ে জনস্বার্থের ইস্যুতে সরব থাকতে চাইছেন দলটির হাইকমান্ড। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে আরও সময় নিতে চান তাঁরা। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি দলকে আরও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোচ্ছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ ঢাকায় সমাবেশ এবং লোডশেডিং ও নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রতিবাদে আরও তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৪খবরবিডিকে বলেন, বিএনপি তো আন্দোলনের মধ্যেই আছে। এর পরও অনেকে জানতে চান, কবে কর্মসূচি দেওয়া হবে? তাঁদের কথা শুনে অবাক হন। আন্দোলন মানে তো গাড়ি ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও নয়। তাঁরা এসবে বিশ্বাস করেন না। জনগণও সেটা চায় না। বিএনপি সব সময় গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, এর আগেও সরকারের বিভিন্ন এজেন্সিকে দিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে বিএনপির ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সরকার একটা বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে বিএনপিকে আন্দোলনে উস্কে দিতে চাইছে। সরকারের নানা ব্যর্থতায় তাঁরা রাজপথেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছেন। তাঁরা ব্যর্থ সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।


-সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমানে দেশে একটা কর্তৃত্ববাদী সরকার রয়েছে। এখানে এখন ভয়ের সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এ রকম প্রেক্ষাপটে প্রতিবাদ করাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু দিন আগে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শাহবাগে বাম দলের মিছিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি, উল্টো পুলিশের লাঠিচার্জে আহতদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে। তাই ইচ্ছা করলেই প্রতিবাদ করাটা সহজ বিষয় নয়। সেটা সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেই।
 

'দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ভোলায় বিএনপির কর্মসূচিতে দু'জন নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে ওই দিন থেকেই কঠোর কর্মসূচির পক্ষে ছিল দলের বড় একটি অংশ। সরকারের 'সৃষ্ট ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না'- এমন সতর্কতা অবলম্বন করে পিছু হটে দলটি। আবার মধ্যরাতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক কর্মসূচি না দেওয়ায়ও দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দলটির এ কৌশলকে রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা বলে সমালোচনাও করছেন সাধারণ মানুষ। আবার বিএনপির আন্দোলনের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। একই সঙ্গে সরকারি দলের নেতারাও বিএনপির আন্দোলনের সামর্থ্য নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন।' এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার প্রশ্নে বিএনপির সিনিয়র নেতারা মনে করছেন, ক্ষমতাসীন দল বিএনপিকে উস্কাচ্ছে। সরকার এখনই তাঁদের আন্দোলনের মাঠে নামাতে চাইছে। এ সুযোগে দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের নতুন করে মামলা-হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইছে। তাঁদের মতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় দেড় বছর বাকি। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে এত আগে মাঠে নামলে ফল নিয়ে ঘরে ফেরা কঠিন হবে। এ মুহূর্তে ইস্যুভিত্তিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী জনমত তৈরিতেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মত দেন নেতারা।


যৌথ সভায়ও রাজপথে নামতে চাপ :দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে গত মঙ্গলবার রাতে দলের এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণসহ সব অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বেশ কয়েকজন নেতা সরকার নিজেদের ব্যর্থতার বোঝা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বৃহৎ দল হিসেবে বিএনপিকে কঠোর প্রতিবাদ জানানো উচিত বলে মত দেন।অবশ্য বৈঠকে সিনিয়র নেতারা হরতাল ও অবরোধের মতো জনভোগান্তি সৃষ্টি করে- এমন কোনো কর্মসূচিতে এই মুহূর্তে না যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। তাঁরা বলেন, সময় অনুযায়ী যুগোপযোগী আন্দোলন করতে হবে। সময় মতো হরতাল ও অবরোধ দিতে হবে। এ সময় তারেক রহমানও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

'এ সময় দলের হাইকমান্ড ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লুটপাট, হত্যা, দখল, দেশবিরোধী কার্যক্রমসহ মানবতাবিরোধী কাজগুলোকে ডকুমেন্টারি আকারে তৈরির নির্দেশ দেন, যাতে আন্দোলন কিংবা নির্বাচনের সময় জনগণের সামনে তা উন্মোচন করা যায়। এ জন্য মিডিয়া সেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী উপস্থিত ছিলেন।

 

আজ ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ :বিএনপি নেতারা জানান, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে দু'দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে চাইছে দলটি। 'ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম ২৪খবরবিডিকে বলেন, ঢাকাবাসী, যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, তাঁরাও এই সমাবেশে আসবেন বলে আশা করছি। মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, আশা করি, আজকের সমাবেশে স্মরণকালের লোকসমাগম ঘটবে। সেভাবেই তাঁরা সব প্রস্তুতি নিয়েছেন।'

-এদিকে লোডশেডিং ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার প্রতিবাদে আরও তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গত মঙ্গলবার দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 রাজপথে কঠোর আন্দোলনে যেতে ঘরেবাইরে চাপের মুখে বিএনপি

আগামী শনিবার বিদ্যুতের সার্বিক পরিস্থিতি, লুটপাট ও পরিকল্পনাহীন সিদ্ধান্তের বিষয় তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করবে দলটি। আগামী বুধবার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ম্ফীতির বিষয়ে এবং ১৯ আগস্ট জ্বালানি বিষয়ে সেমিনার আয়োজন করা হবে।

সমমনারাও চান রাজপথের কর্মসূচি :বিএনপির সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও চাইছে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপির মতো বড় দল রাজপথের কর্মসূচি দিক। জনগণের জন্য তারা রাজনীতি করছে। তাদের দুর্দশায় যদি কঠোর আন্দোলনে না যেতে পারে, তাহলে জনগণের কাছেই জবাবদিহি করতে হতে পারে। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হলে প্রত্যক্ষ কর্মসূচি দরকার। সেটা হরতাল হতে পারে, অবস্থান ধর্মঘট কিংবা অন্য কর্মসূচিও দেওয়া যেতে পারে। বিএনপি হয়তো তার কৌশল ও সক্ষমতা নিয়ে কর্মসূচি পালন করছে ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত