প্রকাশ :
২৪খবরবিডি: 'আমি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম। আমার যখন জন্ম হয় তখন এই দেশে একটা কলঙ্কের দগদগে ঘা আর খুনিদের হোলিখেলা চলছিল। একদিকে ছিল সপিরবারে জাতির পিতাকে হারানোর শূন্যতা, আরেকদিকে ছিল ইতিহাস বিকৃতির ঘৃণ্য প্রচষ্টা।'
-সরাসরি রাজনীতির সাথে তিনি সম্পৃক্ত না থাকলেও অন্তরালে থেকে তিনি বঙ্গবন্ধুকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করেছেন। বঙ্গবন্ধু যখন জেলখানায় থাকতেন তখন তাঁর অবর্তমানে সংগঠন পরিচালনার গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। একদিকে যেমন নেতা-কর্মীদের দিক নির্দেশনা দিতেন, সাহস দিতেন, পরামর্শ দিতেন। অন্যদিকে, সংগঠন চালানোর প্রয়োজনীয় অর্থও তাঁকেই জোগাড় করতে হতো। বঙ্গবন্ধু জেলে থাকলে বঙ্গমাতা তাঁকে জেলগেটে দেখতে গিয়ে নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর দিতেন আবার জেলগেট থেকে ফিরে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত দিক-নির্দেশনাও নেতা-কর্মীদের পৌঁছে দিতেন। তিনি সবসময় বঙ্গবন্ধুকে উজ্জীবিত করেছেন, ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর ত্যাগ, নিষ্ঠা বঙ্গবন্ধুকে নির্ভিকচিত্তে দেশের জন্য কাজ করতে সাহায্য করেছে। ইচ্ছা করলেই তিনি তাঁর স্বামীকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে এনে সংসারে মনোযোগী করতে পারতেন, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে সংসার করতে পারতেন। তা না করে তিনি সবসময় সংসার, ছেলে-মেয়ের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সংসারের পিছুটান থেকে দূরে রাখতেন। এতে করে বঙ্গবন্ধু'র পক্ষে শতভাগ দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করা সহজ হয়েছে।
'কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় বিট্রিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন বঙ্গবন্ধু। তখন থেকেই সদ্য কৈশোরে উত্তীর্ণ বঙ্গমাতা তাঁর রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার সাথে জড়িয়ে পড়েন। দেশ বিভাগের পূর্বে ১৯৪৬ সালে দাঙ্গার সময় বঙ্গমাতা নিজের অসুস্থতা সত্ত্বেও স্বামীকে নিজের কাছে না রেখে কলকাতার দাঙ্গাপীড়িত মানুষকে সহায়তা করার জন্য পরামর্শ দিয়ে দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।'
'এসময় বঙ্গমাতাকে ভয় দেখানো হয় পাকিস্তানিদের শর্ত না মানলে তিনি বিধবা হবেন। বঙ্গমাতা বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে বঙ্গবন্ধুকে মাথা নত না করার সাহস জোগান এবং প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বৈঠকে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত দেন। বঙ্গবন্ধু প্যারোলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানের চাপে পাকিস্তান সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় দেওয়া বঙ্গবন্ধ'র ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি ভাষণ, যা ইউনেস্কো কর্তৃক 'ডকুমেন্টারি হেরিটেজ' হিসেবে স্বীকৃত। এই ঐতিহাসিক ভাষণেও বঙ্গবন্ধুকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন বঙ্গমাতা। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন ''তোমার যা মন চায়, তুমি তাই বলবে।''
-২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই পাকসেনারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করেন, বঙ্গমাতা তখন পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতারের পর থেকে পাকিস্তানিদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বঙ্গমাতা তাঁর সন্তানদের নিয়ে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে আশ্রয় নেন। অসীম সাহস ও ধৈর্য নিয়ে তিনি সেই সময়ের পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন। আন্দোলন-সংগ্রামের উত্তাল সময়গুলোতে নিজ বাড়িতে পরম মমতায় নির্যাতিত নেতা-কর্মীর আত্মীয় স্বজনদের আপ্যায়ন করতেন, সুবিধা-অসুবিধা শুনে ব্যবস্থা নিতেন। আশাহত নেতাকর্মীরা তাঁর কথায় আশার আলো পেতেন। বেগম মুজিবের আশাজাগানিয়া বক্তব্য থেকে আসতো আন্দোলনের জ্বালানি।
-শৈশব থেকে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি আগলে রেখেছিলেন প্রিয় স্বামীকে। তিনি যদি বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা, রাজনৈতিক সহকর্মী হয়ে না উঠতে পারতেন তাহলে হয়তো ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুও একজন অন্যতম নেতা হয়ে উঠতে পারতেন না। আর বঙ্গবন্ধু্র' প্রিয়কন্যা হাসু থেকে আজকের বাংলাদেশের অভিভাবক, জননেত্রী, দেশরত্ন, প্রধানমন্ত্রী
যেন কবি নজরুলের ‘বিজয়-লক্ষ্মী’ নারী বঙ্গমাতা
শেখ হাসিনায় পরিণত হওয়াও বঙ্গবন্ধু'র পাশাপাশি তিনি বঙ্গমাতার সন্তান বলেই সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রতিটি ধাপে বঙ্গবন্ধু'র সহধর্মিনী হিসেবে নয়, একজন নিরব দক্ষ সংগঠক হিসেবে তিনি বঙ্গবন্ধু'র পাশে থেকে বাঙালির প্রতিটি সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হিমালয় সমআসনে অধিষ্ঠিত করতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
-বলা হয়ে থাকে, প্রতিটি সফল পুরুষের পিছনে রয়েছে একজন নারী। বঙ্গবন্ধু'র পুরোটা জীবনে সেই শৈশব থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিলেন যে নারী তিনি হলেন রেণু। খোকা থেকে মুজিব, মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে যে মানুষটির অবদান অনস্বীকার্য তিনি আর কেউ নন, তিনিই আমাদের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ব্যক্তিজীবনে সহধর্মিনী হিসেবেই নয়, বঙ্গবন্ধু'র রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে আমৃত্যু ছায়ার মতো পাশে ছিলেন তিনি। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ইতিহাসের কালজয়ী মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অনুপ্রেরণাদায়ী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু'র রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শকে বাস্তবায়ন করতেও পেছন থেকে কাজ করেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ যেমন এক সূত্রে গাঁথা, তেমনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতু্ন্নেছা মুজিবও অবিচ্ছেদ্য নাম। তিনি শুধু এই সবুজ বাংলার আবহমান শ্বাশত বাঙালি মাতৃরূপই না, তিনি যেন কবি নজরুলের সেই বিজয়লক্ষ্মী নারী। যিনি শক্তি দিয়ে, সাহস দিয়ে বারবার জয়ী করে যাওয়া পুরুষের তরবারি। লেখক: বিসিএস (তথ্য) সংযুক্তিতে- প্রেস উইং, প্রধানমন্ত্রী'র কার্যালয়